সেরা অনলাইন কোচিং এবং প্রস্তুতির একটি বিশ্লেষণধর্মী প্রতিবেদন

 জিএসটি (গুচ্ছ) ভর্তি পরীক্ষা: সেরা অনলাইন কোচিং এবং প্রস্তুতির একটি বিশ্লেষণধর্মী প্রতিবেদন

সারসংক্ষেপ

এই প্রতিবেদনটি বাংলাদেশের জিএসটি (General, Science & Technology) গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য বিদ্যমান অনলাইন কোচিং সেন্টারগুলোর একটি গভীর বিশ্লেষণ ও তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরেছে। শিক্ষার্থীদের জিজ্ঞাসার পরিপ্রেক্ষিতে, প্রতিবেদনটি কেবল কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের নাম উল্লেখ না করে, বরং তাদের প্রদত্ত সেবার ধরণ, খরচ, কার্যকারিতা এবং এর সঙ্গে সম্পর্কিত ভর্তি প্রক্রিয়ার সামগ্রিক দিকগুলো নিয়ে আলোচনা করেছে। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যে, "GST" শব্দটি অন্য প্রেক্ষাপটে ভারতের "Goods and Services Tax" সম্পর্কিত পেশাদার কোর্সকেও নির্দেশ করতে পারে । তবে এই প্রতিবেদনটি শুধুমাত্র বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি সংক্রান্ত বিষয় নিয়েই আলোকপাত করেছে। 

প্রাপ্ত তথ্যানুসারে, বাংলাদেশে জিএসটি ভর্তি পরীক্ষার জন্য অনলাইন কোচিং সেবায় টেন মিনিট স্কুল, উদ্ভাস, এবং ইউসিসি-এর মতো শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলো নেতৃত্ব দিচ্ছে। এই প্ল্যাটফর্মগুলো তাদের নিজস্ব কৌশল অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের জন্য বিভিন্ন ধরনের কোর্স অফার করছে। প্রতিবেদনটি অনলাইন প্রস্তুতির সুবিধা-অসুবিধা, শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা এবং গুচ্ছ ভর্তি পদ্ধতির অভ্যন্তরীণ চ্যালেঞ্জগুলোও বিশদভাবে বিশ্লেষণ করেছে, যা ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের একটি সুচিন্তিত সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়তা করবে।

১. জিএসটি গুচ্ছ ভর্তি পদ্ধতি: একটি সামগ্রিক পর্যালোচনা
১.১. জিএসটি গুচ্ছ পদ্ধতি কী?

জিএসটি গুচ্ছ ভর্তি পদ্ধতি হলো বাংলাদেশের কিছু সাধারণ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ে একটি সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা ব্যবস্থা। এই পদ্ধতির মূল উদ্দেশ্য ছিল শিক্ষার্থীদের ভর্তি পরীক্ষার ভোগান্তি ও আর্থিক ব্যয় কমানো । প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী এবং বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের উপস্থিতিতে একটি সভার মাধ্যমে ২০২০-২০২১ শিক্ষাবর্ষ থেকে এই পদ্ধতি চালু করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় । প্রথমবার এই গুচ্ছ পদ্ধতিতে ২০টি বিশ্ববিদ্যালয় যুক্ত হয় । বর্তমানে, ২০২৪ সালের তথ্য অনুযায়ী, ১৯টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এই পদ্ধতির অধীনে রয়েছে । তবে, সম্প্রতি জগন্নাথ, খুলনা, সিলেট এবং কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো কিছু বিশ্ববিদ্যালয় অভ্যন্তরীণ জটিলতার কারণে এই পদ্ধতি থেকে বেরিয়ে নিজস্ব প্রক্রিয়ায় শিক্ষার্থী ভর্তির সিদ্ধান্ত নিয়েছে । 

গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার আবেদন ফি সাধারণত ১৫০০ টাকা এবং আর্কিটেকচার বিভাগে ব্যবহারিক পরীক্ষার জন্য অতিরিক্ত ৫০০ টাকা জমা দিতে হয় । পরীক্ষাটি ১০০ নম্বরের বহুনির্বাচনী (MCQ) পদ্ধতিতে অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে প্রতিটি ভুল উত্তরের জন্য ০.২৫ নম্বর কাটা যায়। এই পরীক্ষার পাস নম্বর ৩০ । 

১.২. ভর্তি প্রস্তুতির প্রেক্ষাপটে কোচিংয়ের ভূমিকা

জিএসটি গুচ্ছ পদ্ধতির অন্যতম প্রধান লক্ষ্য ছিল শিক্ষার্থীদের আর্থিক ও মানসিক চাপ কমানো । কিন্তু এই পদ্ধতির দুর্বলতা এবং শিক্ষার্থীদের মধ্যে থাকা অনিশ্চয়তা কোচিং সেন্টারগুলোর জন্য একটি সমান্তরাল বাজার তৈরি করে রেখেছে। ভর্তি পরীক্ষার জন্য কোচিং সেন্টারগুলো শিক্ষার্থীদের প্রস্তুতিকে একটি নির্দিষ্ট রুটিনের মধ্যে নিয়ে আসে, যা স্ব-প্রস্তুতির ক্ষেত্রে অনেক সময় সম্ভব হয় না । কোচিংয়ের মাধ্যমে অধ্যায়-ভিত্তিক ও মডেল টেস্টে অংশগ্রহণ করে শিক্ষার্থীরা পরীক্ষার হলের জন্য সময় ব্যবস্থাপনার দক্ষতা বৃদ্ধি করতে পারে এবং তাদের আত্মবিশ্বাস বাড়ে । 

জিএসটি পদ্ধতির মূল উদ্দেশ্য ছিল শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি কমানো, কিন্তু দেখা যায় যে, ভর্তি প্রক্রিয়া এখনও জটিলতা মুক্ত নয় । প্রতি বছর বহু আসন শূন্য থাকা এবং একাধিক মাইগ্রেশন প্রক্রিয়ার পরেও আসন পূরণ না হওয়ার মতো ঘটনা শিক্ষার্থীদের মধ্যে এক ধরনের অনিশ্চয়তা তৈরি করে । এই অনিশ্চয়তা থেকেই শিক্ষার্থীরা নিজেদের প্রস্তুতিকে আরও সুসংহত করতে কোচিংয়ের উপর নির্ভরতা বাড়ায়। ফলস্বরূপ, গুচ্ছ পদ্ধতির দুর্বলতা শিক্ষার্থীদের মধ্যে আরও বেশি কোচিং নির্ভরতার জন্ম দিচ্ছে, যা কোচিং প্রতিষ্ঠানগুলোর বাণিজ্যিক কার্যক্রমকে আরও প্রসারিত করছে। 

২. প্রধান অনলাইন কোচিং সেন্টারগুলোর বিস্তারিত বিশ্লেষণ

জিএসটি গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য বেশ কয়েকটি জনপ্রিয় অনলাইন কোচিং প্ল্যাটফর্ম রয়েছে। এদের মধ্যে প্রধান কয়েকটি হলো টেন মিনিট স্কুল, উদ্ভাস, এবং ইউসিসি।

২.১. টেন মিনিট স্কুল (10 Minute School)

টেন মিনিট স্কুল একটি সম্পূর্ণ অনলাইন-ভিত্তিক এডটেক প্ল্যাটফর্ম যা জিএসটি গুচ্ছের পাশাপাশি অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য সমন্বিত প্রস্তুতিমূলক কোর্স সরবরাহ করে। তাদের কোর্সগুলো বিজ্ঞান (A ইউনিট), মানবিক (B ইউনিট) এবং বাণিজ্য (C ইউনিট) শিক্ষার্থীদের জন্য আলাদাভাবে সাজানো হয়েছে । 

তাদের প্রতিটি কোর্সে নির্দিষ্ট সংখ্যক লাইভ ক্লাস, রেকর্ডকৃত ক্লাস, এবং লেকচার শিট অন্তর্ভুক্ত থাকে। উদাহরণস্বরূপ, ভার্সিটি 'C' ইউনিটের কোর্সে মোট ৮৮টি লাইভ ক্লাস রয়েছে, যার মধ্যে ১৬টি ক্লাস বিশেষভাবে গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য নিবেদিত । এই প্ল্যাটফর্মটি শিক্ষার্থীদের জন্য একটি একক প্যাকেজে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এবং গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়সহ ২২টিরও বেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রস্তুতি সম্পন্ন করার সুযোগ দেয় । এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের ভিন্ন ভিন্ন কোর্সের খরচ ও ঝামেলা কমে যায়। এছাড়া, প্রতিটি কোর্সে ডাউট সলভিং জুম সেশন ও সার্বক্ষণিক মেন্টরশিপের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের প্রশ্ন সমাধানের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে । টেন মিনিট স্কুলের এই ব্যাপক কভারেজ এবং ডিজিটাল প্রযুক্তি নির্ভরতা তাদের প্রধান কৌশল হিসেবে কাজ করে, যা শিক্ষার্থীদের ভিন্ন ভিন্ন ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতির চাপ এক কোর্সে সামলানোর সুবিধা দেয়। 

২.২. উদ্ভাস ও উন্মেষ (Udvash & Unmesh)

উদ্ভাস, বাংলাদেশের অন্যতম ঐতিহ্যবাহী একটি কোচিং সেন্টার, অনলাইন কোচিংয়ের প্রসারের সাথে তাল মিলিয়ে একটি হাইব্রিড মডেল গ্রহণ করেছে। তাদের মূল মডেলটি হলো "অফলাইনের সাথে অনলাইন ফ্রি!" । এই মডেলের অধীনে শিক্ষার্থীরা অফলাইন কোচিংয়ে ভর্তি হলে অনলাইন সেবাগুলো বিনামূল্যে ব্যবহার করার সুযোগ পায়। 

উদ্ভাস বিভিন্ন কোর্স ফি-এর প্যাকেজ অফার করে, যা ৫০০০ টাকা থেকে শুরু করে ১৭০০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে । এই প্যাকেজগুলোতে ম্যারাথন লাইভ ক্লাস, প্রশ্নব্যাংক মাস্টার ক্লাস, সাপ্তাহিক ও ফাইনাল মডেল টেস্ট এবং মানসম্মত প্রস্তুতি সহায়ক বই অন্তর্ভুক্ত থাকে । অফলাইন বা কম্বো ব্যাচের ওপর নির্ভর করে কোর্স ফি পরিবর্তিত হয় এবং পূর্ববর্তী শিক্ষার্থীদের জন্য ১০০০ টাকা ছাড়ের ব্যবস্থাও রয়েছে । উদ্ভাস-এর এই কৌশলটি এমন শিক্ষার্থীদের জন্য উপযুক্ত যারা অফলাইনের সরাসরি তত্ত্বাবধানের পাশাপাশি অনলাইনেও নিজেদের সুবিধামতো প্রস্তুতি চালিয়ে যেতে চায়। অনলাইন শিক্ষার প্রসারের ফলে ঐতিহ্যবাহী কোচিং সেন্টারগুলো বাজারে নিজেদের অবস্থান ধরে রাখতে এই ধরনের মিশ্র সেবা প্রদান করছে। 

২.৩. ইউসিসি (UCC)

ইউসিসি, একটি দীর্ঘ প্রতিষ্ঠিত কোচিং প্রতিষ্ঠান, সম্প্রতি বাংলাদেশের এডটেক প্রতিষ্ঠান 'শিখো' এর সাথে একটি অংশীদারিত্বের ঘোষণা দিয়েছে । এই অংশীদারিত্বের মাধ্যমে ইউসিসি তাদের সুদীর্ঘকালের পাঠ্যক্রমকে ডিজিটাইজ করে সারা দেশের শিক্ষার্থীদের জন্য অনলাইনে সহজলভ্য করছে। এটি বাংলাদেশের শিক্ষা খাতে একটি বড় পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেয়, যেখানে ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের অভিজ্ঞতাকে প্রযুক্তির সাথে সংযুক্ত করে আরও বেশি শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছাতে চাইছে। 

ইউসিসি-এর কোর্সগুলোতে ভার্সিটি 'ক' ইউনিট + গুচ্ছ এবং 'গ' ইউনিট + গুচ্ছ প্রস্তুতির জন্য কোর্স ফি ১৫০০০ থেকে ১৮০০০ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে । এছাড়াও, শুধুমাত্র অনলাইন কোর্সের জন্য ফি ১০,০০০ টাকা । ইউসিসি তাদের কোর্সে নিয়মিত ক্লাস ও মডেল টেস্টের উপর জোর দেয়, যা শিক্ষার্থীদের সঠিক দিকনির্দেশনা প্রদান করে বলে দাবি করা হয় । উল্লেখ্য, কিছু গবেষণা উপাদানে জ্যামাইকার একটি ভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (University of the Commonwealth Caribbean) এবং তাদের পেশাদার কোর্স নিয়ে আলোচনা রয়েছে । তবে, এই প্রতিবেদনটি বাংলাদেশের ইউসিসি-এর গুচ্ছ ভর্তি প্রস্তুতির উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে। 

২.৪. অন্যান্য প্ল্যাটফর্মসমূহ

উপরে উল্লিখিত প্রধান কোচিং সেন্টারগুলো ছাড়াও আরও কিছু প্ল্যাটফর্ম জিএসটি ভর্তি প্রস্তুতির জন্য সেবা প্রদান করছে। এর মধ্যে ফোকাস কোচিংকে কিছু শিক্ষার্থী "পরিবারের মতো" একটি প্রতিষ্ঠান হিসেবে সুপারিশ করেছে এবং তাদের অনলাইন কার্যক্রমকে "সুশৃঙ্খল" বলে মন্তব্য করেছে । চর্চা (Chorcha) নামের একটি প্ল্যাটফর্ম মূলত একটি প্রশ্নব্যাংক এবং মডেল টেস্ট অ্যাপ । এই অ্যাপটি জিএসটি সহ বিভিন্ন ভর্তি পরীক্ষার জন্য মডেল টেস্ট প্যাকেজ সরবরাহ করে । আরেকটি নতুন অনলাইন প্ল্যাটফর্ম হলো হুলকেনস্টেইন (HulkenStein) যা কম খরচে বিভিন্ন কোর্স অফার করে থাকে । 

৩. অনলাইন বনাম অফলাইন কোচিং: একটি তুলনামূলক বিশ্লেষণ

ভর্তি প্রস্তুতির জন্য কোচিং নির্বাচনের ক্ষেত্রে অনলাইন এবং অফলাইন পদ্ধতির সুবিধা ও সীমাবদ্ধতাগুলো বিবেচনা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

৩.১. অনলাইন কোচিংয়ের সুবিধা

অনলাইন কোচিং শিক্ষার্থীদের জন্য বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য সুবিধা নিয়ে এসেছে। এর প্রধান সুবিধা হলো আর্থিক সাশ্রয়। বাসা থেকে ক্লাস করার সুযোগ থাকায় শিক্ষার্থীদের যাতায়াত এবং থাকা-খাওয়ার খরচ কমে যায়, যা ঢাকার বাইরের শিক্ষার্থীদের জন্য একটি বড় আর্থিক সুবিধা । এছাড়াও, অনলাইন কোচিং সময় সাশ্রয় করে। শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা দেওয়ার জন্য দূর-দূরান্তে ভ্রমণ করতে হয় না । এর ফলে, তারা তাদের মূল্যবান সময় পড়াশোনার জন্য ব্যবহার করতে পারে। অনলাইন প্ল্যাটফর্মগুলো অনেক সময় শিক্ষার্থীদের ২৪/৭ সাপোর্ট দিয়ে থাকে, যার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা যেকোনো সময় তাদের প্রশ্ন ও সমস্যার সমাধান পেতে পারে । 

৩.২. অনলাইন কোচিংয়ের সীমাবদ্ধতা ও চ্যালেঞ্জ

অনলাইন কোচিংয়ের কিছু সীমাবদ্ধতাও রয়েছে। কিছু শিক্ষার্থীর মতে, অনলাইনে পড়াশোনা অফলাইনের মতো কার্যকর হয় না, এবং এটি তাদের মধ্যে বিচ্ছিন্নতা সৃষ্টি করতে পারে । অফলাইন কোচিংয়ে যে রুটিন ও শৃঙ্খলার মধ্যে থাকা যায়, অনলাইনে তা অনেক সময় সম্ভব হয় না। কিছু শিক্ষার্থীর অভিজ্ঞতা অনুযায়ী, কোচিং সেন্টারগুলো অনেক সময় অতিরিক্ত টাকা আদায়ের জন্য অপ্রয়োজনীয় বই বা মডেল টেস্টের নামে প্রতারণা করে থাকে । কোচিংয়ে ভর্তি হওয়াকে অনেকেই কেবল সময় ও অর্থের অপচয় হিসেবেও বিবেচনা করে । 

৪. শিক্ষার্থীদের অভিজ্ঞতা ও পর্যালোচনা

ভর্তি পরীক্ষার কোচিং সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। কিছু শিক্ষার্থী কোচিংকে প্রস্তুতির একটি অপরিহার্য অংশ মনে করে, আবার অনেকে কোচিংয়ের কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে।

৪.১. সফলতার গল্প থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা

গুচ্ছ 'বি' ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় প্রথম স্থান অর্জনকারী সিজরাত জাহান প্রকৃতি (২০২২-২০২৩ শিক্ষাবর্ষ) কোচিং সেন্টারে ক্লাস করার পাশাপাশি নিজের প্রচেষ্টা ও নিয়মিত পড়াশোনার উপর সবচেয়ে বেশি জোর দিয়েছেন । তার মতে, সফলতার মূল চাবিকাঠি হলো "নিজের চেষ্টা ও নিয়মিত পড়াশোনা" এবং "বেসিক নলেজ ভালো থাকা" । এই ধরনের উদাহরণ প্রমাণ করে যে, কোচিং সেন্টারগুলো একটি সহায়ক ভূমিকা পালন করলেও, শেষ পর্যন্ত একজন শিক্ষার্থীর নিজস্ব অধ্যবসায় এবং মৌলিক জ্ঞানই সফলতার প্রধান কারণ। 

৪.২. কোচিং নিয়ে বিতর্ক

কিছু শিক্ষার্থী কোচিং সেন্টারগুলোর বিরুদ্ধে তীব্র নেতিবাচক মন্তব্য করেছে । তাদের মতে, কোচিং সেন্টারগুলো "চরম লেভেলের মিথ্যাবাদী" এবং তারা "টাকার জন্য যা কিছু করতে পারে" । এই ধরনের অভিযোগগুলো কোচিংয়ের বিপণন এবং বাস্তব অভিজ্ঞতার মধ্যে একটি বড় পার্থক্যকে নির্দেশ করে। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যে, ভর্তি কোচিং কোনো সফলতার গ্যারান্টি দেয় না, বরং এটি একটি সহায়ক সরঞ্জাম মাত্র। একজন শিক্ষার্থীকে কোচিংয়ের উপর অতিরিক্ত নির্ভরশীলতা পরিহার করে নিজেদের প্রস্তুতিতে মনোযোগী হতে হবে। 

৫. গুচ্ছ ভর্তি পদ্ধতির অভ্যন্তরীণ চ্যালেঞ্জসমূহ

গুচ্ছ ভর্তি পদ্ধতির মূল লক্ষ্য পূরণে কিছু অভ্যন্তরীণ চ্যালেঞ্জ বিদ্যমান। এই চ্যালেঞ্জগুলো শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি কমাতে কোচিংয়ের প্রয়োজনীয়তা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।

৫.১. আসন শূন্য থাকার সংকট

গুচ্ছ ভর্তি পদ্ধতির একটি প্রধান সমস্যা হলো প্রতি বছর অনেক আসন শূন্য থাকা । কিছু বিশ্ববিদ্যালয় একাধিকবার মাইগ্রেশন ও সাক্ষাৎকার নিয়েও আসন পূরণ করতে পারে না । এই সংকটের কারণ হলো, শিক্ষার্থীরা একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেলে তারা অপেক্ষাকৃত ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে মাইগ্রেট করে, যার ফলে পূর্বের বিশ্ববিদ্যালয়ের আসনটি শূন্য থাকে। এটি প্রশাসনিক জটিলতা এবং শিক্ষার্থীদের আর্থিক বোঝা বাড়িয়ে তোলে, কারণ তাদের বারবার ভর্তি বাতিল ও নতুন করে ভর্তির জন্য খরচ বহন করতে হয় । 

৫.২. আর্থিক ও প্রশাসনিক জটিলতা

গুচ্ছ পদ্ধতির মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের আর্থিক বোঝা কমানোর চেষ্টা করা হলেও, তা পুরোপুরি সফল হয়নি। গুচ্ছের ১২০০ টাকা আবেদন ফির পর শিক্ষার্থীদের প্রতিটি ইউনিটের জন্য অতিরিক্ত ৪০০-৬৫০ টাকা খরচ করতে হয় । এছাড়া, ঢাকা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম, এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো বড় বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এই পদ্ধতির বাইরে থাকায় শিক্ষার্থীদের আলাদাভাবে এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য প্রস্তুতি ও পরীক্ষা দিতে হয় । এর ফলে, শিক্ষার্থীদের আর্থিক ও মানসিক চাপ কমেছে, এমনটি বলা কঠিন। 

৬. চূড়ান্ত নির্দেশনা এবং কৌশলগত দিকনির্দেশনা

৬.১. সঠিক কোচিং সেন্টার নির্বাচন

একটি অনলাইন কোচিং সেন্টার বেছে নেওয়ার সময় নিম্নলিখিত বিষয়গুলো বিবেচনা করা উচিত:

কোর্সের ধরণ: কোর্সটি আপনার টার্গেট ইউনিটের জন্য সুনির্দিষ্ট এবং পর্যাপ্ত সংখ্যক ক্লাস ও পরীক্ষা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে কি না তা যাচাই করুন।

মূল্য ও সুবিধা: কোর্স ফি আপনার বাজেটের মধ্যে আছে কি না এবং তা প্রদত্ত সেবার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ কি না তা নিশ্চিত করুন। পূর্ববর্তী শিক্ষার্থীদের জন্য কোনো ছাড় আছে কি না তাও দেখতে পারেন । 

ডাউট সলভিং ব্যবস্থা: প্রশ্ন সমাধানের জন্য তাদের ২৪/৭ সাপোর্ট বা লাইভ ডাউট সলভিং সেশন আছে কি না তা দেখুন । 

প্রস্তুতি সহায়ক উপাদান: কোর্সের সাথে প্রশ্নব্যাংক, লেকচার শিট, এবং মডেল টেস্টের ব্যবস্থা আছে কি না তা নিশ্চিত করুন।

৬.২. স্ব-প্রস্তুতির গুরুত্ব

কোচিং সেন্টার শুধু একটি সহায়ক মাধ্যম। সফলতার মূল ভিত্তি হলো নিজের মৌলিক জ্ঞান, কঠোর অধ্যবসায় এবং একটি সুশৃঙ্খল রুটিন । কোচিংয়ের উপর অতিরিক্ত নির্ভরশীলতা পরিহার করে নিজের বেসিককে শক্তিশালী করার দিকে মনোযোগ দিন। কোচিংয়ের ক্লাস ও পরীক্ষার পাশাপাশি নিয়মিতভাবে নিজে পড়াশোনা এবং বিগত বছরের প্রশ্ন সমাধান অনুশীলন করা অত্যন্ত জরুরি। 

৬.৩. ভর্তি প্রক্রিয়া ও মাইগ্রেশন সংক্রান্ত পরামর্শ

গুচ্ছ ভর্তি ও মাইগ্রেশন প্রক্রিয়ার জটিলতাগুলো দক্ষতার সাথে মোকাবেলা করার জন্য সর্বদা আপডেট থাকুন। বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট এবং নোটিশগুলো নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করুন। কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর অপেক্ষাকৃত ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ের সুযোগ পেলে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় আর্থিক ও একাডেমিক উভয় দিক বিবেচনা করুন।

৭. উপসংহার

জিএসটি গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা শিক্ষার্থীদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ সৃষ্টি করেছে। অনলাইন কোচিং সেন্টারগুলো এই প্রস্তুতির একটি কার্যকর মাধ্যম হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে, যা শিক্ষার্থীদেরকে দূরবর্তী অঞ্চল থেকেও পড়াশোনার সুযোগ করে দিচ্ছে। টেন মিনিট স্কুলের মতো প্রতিষ্ঠান তাদের সম্পূর্ণ অনলাইন মডেল দিয়ে এবং উদ্ভাস ও ইউসিসি তাদের হাইব্রিড মডেল দিয়ে এই বাজারে নিজেদের অবস্থান সুসংহত করেছে।

তবে, কোচিং সেন্টারের উপর অতিরিক্ত নির্ভরশীলতা পরিহার করে, শিক্ষার্থীদের নিজস্ব মেধা, পরিশ্রম এবং মৌলিক জ্ঞানের উপর ভরসা রাখা উচিত। কারণ, গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় প্রথম স্থান অর্জনকারী সিজরাত জাহান প্রকৃতির মতো শিক্ষার্থীরা প্রমাণ করেছে যে, নিজের বেসিক নলেজ এবং নিয়মিত পড়াশোনাই সফলতার মূল চাবিকাঠি । একইসাথে, গুচ্ছ পদ্ধতির অভ্যন্তরীণ সমস্যা যেমন আসন খালি থাকা এবং প্রশাসনিক জটিলতাগুলো দূর করা গেলে শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি ও আর্থিক বোঝা আরও কার্যকরভাবে কমানো সম্ভব হবে। 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন